সংশোধনী- প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে (কালবেলা ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে দৈনিক কালবেলা পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত “তৌফিক-ই-ইলাহীর প্রভাবে বড় দাও সামিটের: মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল” শিরোনামে একটি সংবাদে কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগের বিষয়ে সামিট বস্তুনিষ্ঠ বক্তব্য ও ব্যাখ্যা দিচ্ছে।
ওই প্রতিবেদনের প্রথম অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, “কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওই বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটিকে ১৭ হাজার কোটি টাকার এলএনজি টার্মিনালের কাজ দেওয়া হয়। মাত্র ১০ দিনের প্রক্রিয়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর একক সিদ্ধান্ত ও চাপে সামিটকে এই কাজ দেওয়া হয়।”
সামিটের বক্তব্যঃ সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড (এসওএসসিএল) ১১ অক্টোবর, ২০২১ সালে ‘ক্রয়, মালিকানা, পরিচালনা ও (সরকারকে) হস্তান্তর (বিওওটি)’- এর ভিত্তিতে দেশের তৃতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা জমা দেয়। এরপর ২০২২-২০২৩ সালে, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) এর সঙ্গে দুই পক্ষের আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের উপস্থিতিতে শর্তাবলী-সংক্রান্ত আলোচনা সাপেক্ষে একাধিকবার দর-কষাকষি হয়। ৩০ মার্চ, ২০২৪ তারিখে আরপিজিসিএল ও পেট্রোবাংলার সঙ্গে সামিট এলএনজি টার্মিনাল-২ এর চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিটি স্বাক্ষরের পূর্বে অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রীসভা কমিটি, আইন মন্ত্রানালয়ের ভেটিং, সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির অনুমোদন সহ সকল বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, সামিটের প্রস্তাবনার প্রায় আড়াই বছর পর এই চুক্তিটি সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় তৃতীয় এফএসআরইউ টার্মিনালটি বাস্তবায়নের জন্য সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং মহেশখালীতে ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ এলাকায় একটি গ্যাস স্টেশন, ৬ কিলোমিটারের সাব-সি গ্যাস পাইপলাইন এবং মুরিং অবকাঠামো নির্মাণ করতে প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে। খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোম্পানিদের নিযুক্ত করে সামিটের এই টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ করতে প্রায় তিনটি শীত মৌসুম লাগবে। কেবলমাত্র সামিট এলএনজি-২ টার্মিনালটি সফলভাবে কার্যকর হওয়ার সাপেক্ষে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে কোনো ধরনের পেমেন্ট পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে, বৈশ্বিক মানদন্ড বিবেচনায় সামিটের প্রস্তাবিত ট্যারিফ সবচেয়ে নূন্যতম।
ওই প্রতিবেদনের আরেকটি অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, “২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল চালু প্রথম টার্মিনালটি ৩ মাস ধরে অচলাবস্থায় কক্সবাজারের কাছাকাছি গভীর সাগরে পড়ে আছে। এদিকে এফএসআরইউ অচল হয়ে পড়ে থাকলেও, তা মেরামতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই সামিটের। ফলে দেশে গ্যাস সংকট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে।”
সামিটের বক্তব্যঃ বিদ্যুৎ, সার ও শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এফএসআরইউ-এর জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় সামিটের কর্মীরা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারেরা জাতীয় গ্রিডে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ চালু করতে দিন-রাত কাজ করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখ থেকে সামিট এলএনজি টার্মিনাল কো. প্রা. লিমিটেড (এসএলএনজি) শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট (এমএমসিএফডি) রিগ্যাসিফিকেশনকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়েছে।
উল্লেখ্য, তিন মাসের অধিক সময় আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালে সামিটের এফএসআরইউ যখন প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সেই সময় থেকে এফএসআরইউ-এর মেরামত সংক্রান্ত খরচ ও কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সামিটের প্রায় শতাধিক কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
দুর্ঘটনা ও মেরামত কাজের বিস্তারিত ঘটনাপ্রবাহ ও চার্টটি নিচে তুলে ধরা হলোঃ

গত ২৩ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ঘূর্ণিঝড় রিমাল শুরুর সময় কৌশলগতভাবে সামিট এফএসআরইউ-এর শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিছুদিন পর ২৭ মে ২০২৪ তারিখে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সর্বোচ্চ প্রভাবের সময় সাগরে ভাসতে থাকা কয়েকশ টন ওজনের একটি ভাঙ্গা পন্টুন বারবার আঘাত করলে সামিট এফএসআরইউ-এর ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞ সার্ভেয়ার দ্বারা এফএফআরইউ-এর ক্ষতি নিরীক্ষার পর, এফএসআরইউটি ডিসকানেক্টেবল কোন এবং প্লাগসহ সিঙ্গাপুরে ড্রাই ডকিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। মেরামত শেষে সিঙ্গাপুর থেকে গত ১০ জুলাই ২০২৪ তারিখে সামিটের এফএফআরইউ কক্সবাজারের মহেশখালীতে এসে পৌঁছায়। পরদিন সমুদ্রের তলদেশে ডিসকানেক্টেবল টারেট মুরিং (ডিটিএম) প্লাগ ও ল্যান্ডিং প্যাডের সঙ্গে এফএসআরইউ-এর নোঙ্গরকরণের প্রস্তুতির সময় আকস্মিকভাবে ডিটিএম বয়া মেসেঞ্জার লাইনে জটলা বেঁধে, মেসেঞ্জার লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সামিট নরওয়েভিত্তিক বিশ্বখ্যাত দুই মেরিটাইম প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাকগ্রেগর’ ও ‘ক্যান সিস্টেম’ এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘শেলফ সাবসি’কে নিযুক্ত করে যেন সামিট এফএসআরইউ-এর সমুদ্রের তলদেশে থাকা ল্যান্ডিং প্যাডের ডিটিএম প্লাগ ত্রুটিমুক্তি করে নিরাপদে মুরিং করতে পারে।
একই সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চলে গেল ৩৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে সাগরের পানিতে পলিমাটি বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্রের তলদেশে দৃশ্যমানতা প্রায় শূণ্যের কোটায় নেমে আসে। ফলে সমুদ্রের গভীরে মেরামত কাজ এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ ডুবুরি এবং বিশ্বের অন্যতম দক্ষ ও শক্তিশালী ভেসেলও হিমশিম খেয়েছে।
জাতীয় গ্রিডের সাথে এফএসআরইউ পুনসংযোগ দিতে হলে ডিটিএম প্লাগটি ল্যান্ডিং প্যাডের (সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থিত) মধ্যবর্তী স্থানে পুনরায় স্থাপন করতে হয়। এজন্য “কোরাল” নামক অ্যাংকর হ্যান্ডেলিং টাগ (এএইচটি) প্রস্তুত করা হলেও সেটি ডিটিএম পুনঃস্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় বল প্রয়োগ করতে পারেনি। এই ডিটিএম সরাতে আরও বেশি শক্তিশালী ও সক্ষম ক্রেন আনার জন্য সামিট ‘ওরিয়েন্টাল ড্রাগন’ নামে একটি ডাইভিং সাপোর্ট ভেহিকলের (ডিএসভি) সাথে চুক্তি করে। ওরিয়েন্টাল ড্রাগন আগস্ট, ২০২৪-এর শেষ নাগাদ ব্যবহারের জন্য পাওয়া যায়। এর পর ওরিয়েন্টাল ড্রাগন সফলভাবে ৩৫ বার সমুদ্রে ডুব দেয় এবং গ্র্যাভিটি অ্যাংকর পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হয়। অবশেষে ১৩১ বার সমুদ্রে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্লান্তিকরভাবে ডুব দেওয়ার পর নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও সামিট এলএনজি টার্মিনালের দল সম্মিলিতভাবে টার্মিনালের সাব-সি অ্যাসেট স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছেন। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ টার্মিনালটি কার্যকরভাবে হোল্ডব্যাক অ্যাংকরে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং সামিট এলএনজি টার্মিনাল ইতিমধ্যে রিগ্যাসিফিকেশন শুরু করেছে ও শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
মূল সংবাদ :
https://www.kalbela.com/ajkerpatrika/firstpage/117309